স্মার্টফোন গরম হয়ে গেলে কি করবেন?

তুমি কি কখনো দেখেছো তোমার ফোনে গেম খেলতে খেলতে হঠাৎ খুব গরম হয়ে যাচ্ছে? বা চার্জ দিতে গিয়ে হঠাৎ গা ছুঁয়ে দেখছো, ফোনটা গরম হয়ে আছে? এখনকার দিনে স্মার্টফোন আমাদের সবার জীবনের একটা বড় অংশ। কাজ, পড়াশোনা, বিনোদন, যোগাযোগ—সব কিছুতেই আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করি। কিন্তু যখন এই দরকারি জিনিসটা হঠাৎ গরম হয়ে যায়, তখন একটু চিন্তা হয় না? এই ব্লগে আমি খুব সহজ ভাষায় তোমাকে জানাবো স্মার্টফোন গরম হওয়ার কারণ, আর কী করলে এই সমস্যাটা কমানো যায়। চলো, তাহলে শুরু করা যাক।

স্মার্টফোন কি?

স্মার্টফোন এক ধরনের মোবাইল ফোন যেটা শুধু কল বা মেসেজ পাঠানোর কাজেই সীমাবদ্ধ না। এটা হচ্ছে এমন একটা যন্ত্র, যেটা দিয়ে তুমি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারো, ভিডিও দেখতে পারো, ছবি তুলতে পারো, গেম খেলতে পারো, এমনকি অফিসের কাজও করতে পারো। এই ফোনগুলোতে থাকে বড় ডিসপ্লে, ক্যামেরা, টাচস্ক্রিন, অ্যাপস ইনস্টল করার সুযোগ, আর অনেক আধুনিক ফিচার। সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে চলে এসব ফোন। তুমি যেসব অ্যাপ ব্যবহার করো, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ—সবই চলে এই স্মার্টফোনে।

এখনকার দিনে প্রায় সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এমনকি গ্রামের একদম প্রান্তিক মানুষও অনেক সময় ইউটিউব দেখে বা ভিডিও কল করে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা তো এখন স্মার্টফোন ছাড়া চলতেই পারে না। এই ফোন দিয়ে অনলাইনে ক্লাস করে, পড়াশোনার নোট নেয়, এমনকি পরীক্ষাও দেয়। ব্যবসায়ীরাও এই ফোন দিয়ে পণ্য বিক্রি করে, অর্ডার নেয়। মানে এক কথায় বললে, স্মার্টফোন এখন জীবনের সাথী।

এই স্মার্টফোনের মধ্যে অনেক সেন্সর থাকে, যেমন ক্যামেরা সেন্সর, নিকটবর্তীতা সেন্সর, অ্যাক্সিলোমিটার ইত্যাদি। এসব সেন্সর বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। আবার স্মার্টফোনে প্রসেসর থাকে, যেটা ফোনের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে। তুমি যখন গেম খেলো, ভিডিও দেখো বা ব্রাউজ করো, এই প্রসেসর তখন জোরে কাজ করে। তখনই অনেক সময় ফোন গরম হয়ে যেতে পারে। নিচে আমরা বিস্তারিত জানবো কী করলে ফোন গরম হওয়া কমানো যায়।

স্মার্টফোন গরম হয়ে গেলে কি করবেন

স্মার্টফোন গরম হওয়া আজকাল খুব সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ভাবেন এটা কোনো বড় সমস্যা না, আবার কেউ কেউ খুব ভয় পেয়ে যান। আসলে সব ফোনেই কখনো না কখনো গরম হয়, কিন্তু অতিরিক্ত গরম হলে সেটা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই চলো এবার জেনে নেই কীভাবে এই সমস্যা কমানো যায়।

১। একটানা অনেকক্ষণ ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন

অনেক সময় আমরা টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে গেম খেলি, ইউটিউব দেখি বা ভারী কোনো অ্যাপ ব্যবহার করি। এতে ফোনের প্রসেসর অনেক চাপের মধ্যে পড়ে এবং তাপ উৎপন্ন হয়। যেমন ধরো, PUBG বা Free Fire এর মতো গেম গুলো অনেক বেশি র‍্যাম এবং প্রসেসর ব্যবহার করে। তুমি যদি একটা গেম এক ঘন্টা খেলো, তাহলে দেখবে ফোন গরম হয়ে গেছে। এর মানে ফোনের ভেতরে অতিরিক্ত প্রসেসিং চলছে, যার ফলে তাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই তাপ যদি বাইরে বেরোতে না পারে, তাহলে সেটা ফোনের অন্যান্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। একটানা অনেকক্ষণ ব্যবহার করলে ব্যাটারিও দ্রুত খরচ হয় এবং গরম হয়ে ওঠে। তাই চেষ্টা করো মাঝে মাঝে বিরতি নিতে। যেমন, আধা ঘণ্টা ব্যবহার করার পর ৫-১০ মিনিট ফোন রেখে বিশ্রাম দিতে পারো। এতে প্রসেসর ঠাণ্ডা হওয়ার সময় পায় এবং ফোন দীর্ঘস্থায়ী হয়। একটানা ব্যবহারের বদলে যদি বিরতি নিয়ে কাজ করো, তাহলে ফোনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

২। চার্জ দেওয়ার সময় ফোন ব্যবহার বন্ধ রাখুন

অনেকেই চার্জ দিতে দিতে ফোন ব্যবহার করেন, বিশেষ করে ইউটিউব দেখা বা গেম খেলা চলতেই থাকে। কিন্তু এটা খুব ক্ষতিকর অভ্যাস। চার্জ দেওয়ার সময় ফোনের ব্যাটারি ও সার্কিটের মধ্যে অতিরিক্ত তাপ তৈরি হয়। তার সঙ্গে যদি তুমি ফোনে কাজ করতে থাকো, তাহলে প্রসেসরও গরম হয়। ফলে ডাবল হিটিং হতে থাকে। এতে ব্যাটারির আয়ু কমে যেতে পারে, এমনকি ফোন হ্যাং করে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, চার্জ দেওয়ার সময় ফোন এত গরম হয়ে যায় যে তুমি ছুঁতেও পারো না। কিছু ক্ষেত্রে তো ফোন বিস্ফোরণের ঘটনাও দেখা গেছে। তাই আমার পরামর্শ হলো, চার্জ দেওয়ার সময় ফোন একপাশে রেখে দাও। চার্জ পুরোপুরি হয়ে গেলে আবার ব্যবহার করো। এতে ফোন নিরাপদে থাকবে এবং তাপও কম হবে।

৩। হেভি অ্যাপস ও গেমস কম ব্যবহার করুন

স্মার্টফোনে কিছু অ্যাপস এমন থাকে যেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে সবসময় চলে এবং প্রচুর র‍্যাম ও প্রসেসিং পাওয়ার খরচ করে। যেমন ধরো, TikTok, Facebook, Instagram এগুলো শুধু চালু থাকলেই নয়, বন্ধ করলেও ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে থাকে। এর ফলে ফোনের প্রসেসর ব্যস্ত থাকে এবং ধীরে ধীরে গরম হয়ে যায়। গেমগুলোর কথাও বলা যায়—Free Fire, COD, Asphalt 9 এগুলোর মতো হেভি গেম অনেক বেশি রিসোর্স খরচ করে। তুমি যদি পুরোনো বা মিড বাজেটের ফোন ব্যবহার করো, তাহলে এই গেম বা অ্যাপসগুলো ফোনের পারফরম্যান্স কমিয়ে দেবে, গরম করবে এবং ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেবে। তাই চেষ্টা করো হালকা অ্যাপস ব্যবহার করতে। আর যদি হেভি অ্যাপ দরকার হয়, তাহলে ব্যবহার শেষে অবশ্যই ক্লিয়ার করে দাও যেন ব্যাকগ্রাউন্ডে না চলে। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস আনইনস্টল করে রাখো, এতে ফোনও হালকা থাকবে।

৪। ফোনের ক্যাশ ও অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করুন

ফোনে অনেক সময় এমন কিছু ফাইল জমে থাকে, যেগুলোর কোনো দরকার নেই। যেমন ক্যাশ ফাইল, পুরোনো আপডেট ফাইল, ডুপ্লিকেট ছবি বা ভিডিও। এসব ফাইল শুধু ফোনের মেমোরি নষ্ট করে না, বরং ফোনকে স্লো করে দেয় এবং প্রসেসরের ওপরে চাপ বাড়ায়। ফলে ধীরে ধীরে ফোন গরম হতে শুরু করে। তুমি চাইলে সপ্তাহে একবার করে ফোনের ক্যাশ ক্লিয়ার করতে পারো। Settings > Storage > Cached Data থেকে ক্লিয়ার করে ফেলো। আবার Clean Master বা Files by Google অ্যাপ ব্যবহার করেও সহজে অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করা যায়। এতে ফোনের ভেতরের জায়গা খালি থাকবে এবং প্রসেসর কম কাজ করবে। এর ফলে তাপও কম তৈরি হবে এবং ফোন ঠাণ্ডা থাকবে।

৫। ফোন কভার খুলে ব্যবহার করুন

অনেক সময় আমরা ফোনে পুরু ব্যাক কভার বা প্লাস্টিক কেস ব্যবহার করি, যাতে ফোনের পেছনে দাগ না পড়ে বা পড়ে গেলেও ভাঙে না। কিন্তু জানো কি, এই কভারের কারণে ফোনের ভেতরে তৈরি হওয়া তাপ বাইরে বের হতে পারে না। ফলে ফোন গরম হয়ে যায়। প্লাস্টিক বা সিলিকন কভার গুলো তাপ আটকে রাখে। তুমি যদি দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহার করো বা চার্জ দাও, তাহলে কভার খুলে রাখো। এতে তাপ সহজে বাইরে বের হতে পারবে এবং ফোন ঠাণ্ডা থাকবে। আবার এমন কিছু কভার আছে যেগুলো হিট রেজিস্ট্যান্ট, সেগুলো ব্যবহার করতে পারো। তবে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, হেভি ইউজ বা চার্জের সময় কভার খুলে ব্যবহার করা। এতে ফোনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং গরম হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।

৬। ফোন আপডেট রাখুন ও অপ্রয়োজনীয় ফিচার বন্ধ করুন

অনেকেই ফোন কেনার পর আর সফটওয়্যার আপডেট করেন না। কিন্তু সফটওয়্যার আপডেট করলে অনেক সময় ফোনের ত্রুটি ঠিক হয়ে যায়, ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালো হয় এবং গরম হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। নতুন আপডেটে অনেক সময় এমন ফিচার আসে যা ফোনকে আরো স্মার্টভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, GPS, Bluetooth, Location Tracking, Mobile Data এসব ফিচার সবসময় চালু থাকলে ফোনের প্রসেসর সবসময় কাজ করে। এতে ব্যাটারি খরচ হয় বেশি এবং ফোন গরম হয়ে যায়। তাই যে ফিচার দরকার নেই, তা বন্ধ রাখো। আবার মাঝে মাঝে ফোন রিস্টার্ট করে নাও, এতে অনেক ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস বন্ধ হয়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে, ফোন যদি আপডেটেড থাকে এবং দরকার ছাড়া বাড়তি ফিচার বন্ধ রাখো, তাহলে ফোন ঠাণ্ডা থাকবে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“স্মার্টফোন গরম হয়ে গেলে কি করবেন?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

স্মার্টফোন কি ইন্টারনেট ছাড়াও কাজ করে?

হ্যাঁ, স্মার্টফোন অনেক কাজ করতে পারে যেমন ছবি তোলা, গেম খেলা, গান শোনা, ডকুমেন্ট দেখা ইত্যাদি—ইন্টারনেট ছাড়াও।

স্মার্টফোন গরম হওয়া কি বিপজ্জনক?

অতিরিক্ত গরম হলে ফোনের ব্যাটারি ও প্রসেসর নষ্ট হতে পারে, এমনকি বিস্ফোরণের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।

উপসংহার

স্মার্টফোন এখন আমাদের জীবনের অংশ। এটা ছাড়া একদিন কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু এই দরকারি জিনিসটার যত্ন না নিলে সেটা আমাদের বিপদে ফেলতে পারে। গরম হয়ে যাওয়া স্মার্টফোন শুধু বিরক্তির কারণ না, অনেক সময় বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। তাই আজ যা শিখলে—যেমন একটানা ব্যবহার না করা, চার্জ দেয়ার সময় ফোন না চালানো, হেভি অ্যাপস কম ব্যবহার করা—এসব নিয়ম মেনে চললে তোমার ফোন অনেকটা ঠাণ্ডা থাকবে আর লম্বা সময় ভালোভাবে চলবে। ফোন যেমন কাজের, তেমনি যত্নেরও। তাহলে আজকে এখানেই শেষ করছি। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, নিচের কমেন্টে জানাও।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *