কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি?
আজকাল আমাদের জীবনটা যেন কম্পিউটার ছাড়া কল্পনাই করা যায় না, তাই না? ঘুম থেকে উঠে অফিসের কাজ, স্কুলের অনলাইন ক্লাস, ইউটিউব দেখা, ফেসবুক চালানো—সবকিছুতেই কম্পিউটার জড়িত। আগে হয়তো শুধু বড় বড় অফিসেই কম্পিউটার ব্যবহার হতো, কিন্তু এখন বাসাতেও অনেকেই ব্যক্তিগত কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। তবে এখনো অনেকেই আছেন যারা ঠিকভাবে জানেন না কম্পিউটার আসলে কী, কীভাবে কাজ করে, বা এর অংশগুলো কী কী। আজকের এই লেখায় আমি আপনাকে সহজ ভাষায় এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলবো। আশা করি আপনি ধাপে ধাপে সব কিছু বুঝে ফেলবেন।
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেটি মানুষের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুতগতিতে বিভিন্ন কাজ করতে পারে। এটি তথ্য গ্রহণ করে, তা প্রক্রিয়াজাত করে এবং ফলাফল দেখায়। ধরুন আপনি ক্যালকুলেটরে ২+২ লিখে সমাধান বের করলেন, এই কাজটিই আরও অনেক বড় স্কেলে করে কম্পিউটার। এটি শুধু গাণিতিক হিসাব নয়, ছবি আঁকা, ভিডিও বানানো, প্রোগ্রামিং, লেখালেখি, ইন্টারনেট ব্রাউজিং সহ অসংখ্য কাজ করতে পারে।
কম্পিউটার কিন্তু নিজে নিজে কিছু করতে পারে না। তাকে কাজ করাতে হলে আগে আপনাকে কিছু নির্দেশনা দিতে হয়, যাকে আমরা সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম বলি। এই প্রোগ্রাম অনুযায়ী কম্পিউটার তার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে আপনার দেওয়া কাজটি করে।
কম্পিউটার কাজ করে ইনপুট, প্রসেস এবং আউটপুট এই তিন ধাপে। প্রথমে আপনি কিছু ইনপুট দেন যেমন কীবোর্ড দিয়ে লেখা, মাউস দিয়ে ক্লিক করা। এরপর প্রসেসিং অংশ কাজটি বিশ্লেষণ করে এবং ফলাফল তৈরি করে। তারপর মনিটরে সেই ফলাফল দেখায়। এক কথায়, কম্পিউটার হলো আমাদের কাজকে দ্রুত ও সহজ করে তোলার জন্য অসাধারণ একটি প্রযুক্তি।
কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি?
কম্পিউটারের মূলত দুটি বড় অংশ আছে—হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যার হলো যেসব অংশ আপনি হাত দিয়ে ধরতে পারেন আর সফটওয়্যার হলো সেই প্রোগ্রাম বা নির্দেশনা যেগুলো কম্পিউটারকে চালায়। এখন আমরা বিস্তারিত জানবো কম্পিউটারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে।
মনিটর
মনিটর হলো সেই অংশ যেটাতে আপনি কম্পিউটারে যা করছেন তা দেখতে পান। এটি এক ধরনের স্ক্রিন, অনেকটা টিভির মতো। আপনি যদি টাইপ করেন, ছবির কাজ করেন, ভিডিও দেখেন—সবকিছু মনিটরে দেখা যায়। মনিটরের আকার ও রেজুলেশন মান ভালো হলে চোখের আরাম হয় এবং কাজের মানও ভালো হয়। এখন অনেক ধরণের মনিটর পাওয়া যায়—এলসিডি, এলইডি, কার্ভড বা টাচস্ক্রিন। প্রতিটি মনিটরেই ছবি দেখানো হয় পিক্সেল দিয়ে, মানে ছোট ছোট ডটের সমন্বয়ে। যতো বেশি পিক্সেল, ততো পরিষ্কার ছবি। অনেকেই এখন গেম খেলার জন্য আলাদা হাই রিফ্রেশ রেটের মনিটর ব্যবহার করে যাতে ভিজ্যুয়াল এক্সপেরিয়েন্স ভালো হয়।
কীবোর্ড
কীবোর্ড হলো টাইপ করার যন্ত্র। আপনি যেকোনো লেখালেখির কাজ কীবোর্ড দিয়ে করেন। এটি দেখতে অনেকটা টাইপরাইটারের মতো, তবে আরও আধুনিক ও কাজের সুবিধাজনক। কীবোর্ডে অনেকগুলো কী বা বোতাম থাকে যেমন—A-Z, ০-৯, ফাংশন কী, শিফট, কন্ট্রোল, অল্ট ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু কীবোর্ডে শর্টকাট কী থাকে যা দিয়ে দ্রুত কাজ করা যায়। বাংলায় টাইপ করার জন্য ইউনিজয়, অভ্র ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহার করে কীবোর্ড দিয়ে লেখা যায়। গেমারদের জন্য বিশেষ গেমিং কীবোর্ডও পাওয়া যায় যার আলো থাকে, দ্রুত টাইপিং সাপোর্ট দেয় এবং বাড়তি সুবিধা থাকে।
মাউস
মাউস হলো ইনপুট ডিভাইস যেটি দিয়ে আপনি স্ক্রিনে কার্সর বা পয়েন্টার ঘোরাতে পারেন। ধরুন, আপনি একটি ছবি ওপেন করতে চান—তাহলে মাউস দিয়ে ক্লিক করেই সেটা করতে পারবেন। মাউস দুই বা তিনটি বোতামের সমন্বয়ে তৈরি হয়—লেফট ক্লিক, রাইট ক্লিক আর মাঝে একটি স্ক্রল হুইল। অনেক কাজ মাউস ছাড়াও করা যায়, তবে মাউস থাকলে কাজ অনেক সহজ হয়, বিশেষ করে ছবি এডিটিং, ফাইল মুভ করা, গেম খেলা ইত্যাদি। এখন তো ওয়্যারলেস মাউসও পাওয়া যায় যেগুলো তার ছাড়াই কাজ করে। এছাড়াও অপটিক্যাল মাউস বা লেজার মাউস অনেক বেশি স্পষ্ট ও দ্রুত কাজ করে।
সিপিইউ
সিপিইউ মানে Central Processing Unit, যা কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বলা হয়। এটি ছাড়া কম্পিউটার একদমই কাজ করে না। আপনি যা কিছু কম্পিউটারে করেন, সবই প্রসেস করে সিপিইউ। এটি মূলত ইনপুট ডেটা নিয়ে সেটি বিশ্লেষণ করে আউটপুট দেয়। সিপিইউ সাধারণত একটি বাক্স বা কেসিং-এর ভিতরে থাকে এবং এর ভিতরে প্রসেসর, মাদারবোর্ড, র্যাম, হার্ডড্রাইভ ইত্যাদি থাকে। যত ভালো মানের প্রসেসর থাকবে, তত দ্রুত কম্পিউটার চলবে। এখন অনেকেই Core i3, i5, i7 এমন প্রসেসর ব্যবহার করেন। পাশাপাশি সিপিইউতে কুলিং ফ্যানও থাকে যাতে অতিরিক্ত গরম না হয়। অফিস, গেমিং, ভিডিও এডিটিং—যেকোনো কাজেই ভালো সিপিইউ দরকার।
প্রিন্টার
প্রিন্টার হলো একটি আউটপুট ডিভাইস যেটি কম্পিউটারের ডেটা বা তথ্য কাগজে ছাপিয়ে দেয়। আপনি যদি কোনো ছবি, রিপোর্ট বা লিখা কাগজে চান, তাহলে প্রিন্টার দরকার। এখন অনেক ধরনের প্রিন্টার রয়েছে যেমন ইনজেট, লেজার, ডট ম্যাট্রিক্স ইত্যাদি। ইনজেট প্রিন্টার ছবি বা রঙিন প্রিন্টের জন্য ভালো, আর লেজার প্রিন্টার দ্রুত ও পরিষ্কার লেখার জন্য ব্যবহার হয়। প্রিন্টার কম্পিউটারের সাথে কেবল বা ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। এখন অনেক প্রিন্টার স্ক্যান, কপি ও ফ্যাক্সও করতে পারে। এক কথায়, অফিস বা বাসার কাজে প্রিন্টার একটা দরকারি যন্ত্র।
সফটওয়্যার
যদিও এটি চোখে দেখা যায় না, তবুও সফটওয়্যার ছাড়া কম্পিউটার একদম অচল। সফটওয়্যার হলো এক ধরনের প্রোগ্রাম যেটা কম্পিউটারকে বলে দেয় কী কাজ করতে হবে। ধরুন আপনি টাইপ করার জন্য Microsoft Word চালান, গান শোনার জন্য VLC Player চালান, এগুলো সব সফটওয়্যার। আবার Windows, Linux, Mac OS এগুলো হলো অপারেটিং সিস্টেম, যেগুলো কম্পিউটারের মূল চালক। সফটওয়্যার দুই ধরণের হয়—সিস্টেম সফটওয়্যার আর অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটার চালাতে সাহায্য করে, আর অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার দিয়ে আপনি নির্দিষ্ট কাজ করতে পারেন। সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়্যার একটুও কাজ করে না।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
“কম্পিউটারের কয়টি অংশ ও কি কি?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
কম্পিউটার ছাড়া কি স্মার্টফোন বা ট্যাব চালানো সম্ভব?
হ্যাঁ, স্মার্টফোন ও ট্যাব চালানো যায় কম্পিউটার ছাড়া, কিন্তু এগুলোর অনেক ফিচার মূলত কম্পিউটার থেকেই এসেছে।
কোন ধরনের কাজের জন্য কেমন কম্পিউটার দরকার?
সাধারণ কাজের জন্য সাধারণ কনফিগারেশন, আর গেমিং বা ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য হাই-পারফরম্যান্স কম্পিউটার দরকার।
উপসংহার
আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন, কম্পিউটার আমাদের জীবনের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর প্রতিটি অংশই ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে কিন্তু মিলেই একটি পূর্ণাঙ্গ যন্ত্র তৈরি করে। যারা পড়াশোনা করেন, অফিসে কাজ করেন, ফ্রিল্যান্সিং করতে চান বা স্রেফ ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন—সবার জন্য কম্পিউটার একটি অপরিহার্য প্রযুক্তি। তাই এর প্রতিটি অংশ সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি আরও ভালোভাবে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ভবিষ্যতে হয়তো আরও উন্নত কম্পিউটার আসবে, কিন্তু ভিত্তি হিসেবে এই জ্ঞানটুকু আপনাকে সবসময় সাহায্য করবে।