১০ টি আউটপুট ডিভাইসের নাম
আপনি যখন কম্পিউটারে কিছু কাজ করেন, যেমন একটা ছবি দেখেন বা প্রিন্ট করেন, তখন যেসব যন্ত্রের মাধ্যমে আপনি সেই কাজের ফলাফল দেখতে পান, সেগুলোকেই বলা হয় আউটপুট ডিভাইস।
এখন ভাবছেন, তাহলে এগুলোর কাজটা আসলে কীভাবে হয়? ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আমরা বিস্তারিতভাবে জানব। সাথে জানব ১০টি জনপ্রিয় আউটপুট ডিভাইসের নাম আর প্রতিটির কাজ কীভাবে হয়, সেটা সহজ ভাষায় বোঝার চেষ্টা করব। তো চলুন, শুরু করা যাক।
আউটপুট ডিভাইস কি?
আউটপুট ডিভাইস হল এমন একধরনের যন্ত্র যা কম্পিউটার থেকে প্রক্রিয়াজাত তথ্য (Processed Data) নিয়ে আমাদের বোধগম্য কোনো রূপে উপস্থাপন করে। অর্থাৎ, আমরা কম্পিউটারে যা কিছু করি – লেখালেখি, ছবি দেখা, ভিডিও দেখা, প্রিন্ট করা – এসবের ফলাফল আমাদের চোখে বা কানে যাতে ধরা পড়ে, সেজন্য যে যন্ত্রগুলো সাহায্য করে, সেগুলোই আউটপুট ডিভাইস।
যেমন, আপনি যদি কম্পিউটারে একটা চিঠি লেখেন, সেটা মনিটরের মাধ্যমে দেখতে পান। আবার যদি সেই চিঠিটা প্রিন্ট করতে চান, তখন প্রিন্টার আপনাকে সাহায্য করে। ঠিক এইভাবেই, আউটপুট ডিভাইসগুলো আমাদের বিভিন্নভাবে তথ্য দেখায় বা শোনায়।
আউটপুট ডিভাইস সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে: Soft Copy এবং Hard Copy। Soft Copy মানে আপনি যে তথ্যগুলো মনিটরে দেখছেন বা স্পিকারে শুনছেন, আর Hard Copy মানে আপনি প্রিন্টারের মাধ্যমে কাগজে যেটা পাচ্ছেন। কম্পিউটার যেহেতু নিজে কথা বলতে বা ছবি দেখাতে পারে না, তাই এসব ডিভাইসের মাধ্যমে সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
১০ টি আউটপুট ডিভাইসের নাম
এই অংশে আমরা জানব ১০টি জনপ্রিয় আউটপুট ডিভাইসের নাম ও বিস্তারিত ব্যবহার। এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগে – স্কুল, অফিস, ব্যবসা বা ঘরে – সবখানেই। নিচে প্রতিটির কাজ ও বৈশিষ্ট্য ভালোভাবে আলোচনা করা হলো।
১. মনিটর
মনিটর হলো সবচেয়ে পরিচিত ও ব্যবহৃত আউটপুট ডিভাইস। আপনি কম্পিউটার চালু করলে যে স্ক্রিনে সব কিছু দেখতে পান – ছবি, লেখা, ভিডিও – সেটাই হচ্ছে মনিটর। এটি মূলত টিভির মতো দেখতে হলেও এর কাজ অনেক বেশি কার্যকর ও স্পষ্ট। মনিটরের মধ্যে আবার বিভিন্ন ধরন রয়েছে যেমন CRT, LCD, LED ইত্যাদি।
CRT মনিটর আগে অনেক বেশি ব্যবহৃত হতো, কিন্তু এখন LCD আর LED মনিটরই বেশি দেখা যায় কারণ এগুলো হালকা, বিদ্যুৎ কম খরচ করে এবং চোখের জন্য আরামদায়ক। বাংলাদেশে এখন প্রায় সব অফিস, স্কুল, এবং বাসায় LCD বা LED মনিটর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বড় মনিটর হলে ভিডিও এডিটিং বা গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য সুবিধা হয়।
২. প্রিন্টার
প্রিন্টার এমন একটি ডিভাইস যা কম্পিউটারের ডেটাকে কাগজে ছাপিয়ে দেয়। আপনি যদি একটি রেজাল্ট শিট, ছবি বা চিঠি প্রিন্ট করতে চান, তাহলে প্রিন্টার ছাড়া উপায় নেই। এটি মূলত Hard Copy তৈরি করে।
বাংলাদেশে সাধারণত ইনজেট ও লেজার প্রিন্টার বেশি ব্যবহার করা হয়। ইনজেট প্রিন্টার সাধারণত বাড়ির কাজের জন্য উপযুক্ত, আর লেজার প্রিন্টার অফিস বা বাণিজ্যিক কাজে বেশি ব্যবহার হয়। কিছু প্রিন্টার স্ক্যান ও ফটোকপি করার কাজও করতে পারে – একে বলা হয় মাল্টিফাংশন প্রিন্টার।
৩. স্পিকার
কম্পিউটার যদি কোনো শব্দ তৈরি করে, সেটা আপনি শুনতে পারবেন না যদি না স্পিকার থাকে। স্পিকার শব্দের আকারে আউটপুট দেয়। আপনি গান শুনুন, মুভি দেখুন বা ভিডিও কল করুন – সবখানে স্পিকারের দরকার পড়ে।
আজকাল প্রায় প্রতিটি ল্যাপটপে বিল্ট-ইন স্পিকার থাকে। কিন্তু ডেস্কটপ কম্পিউটারে আলাদা স্পিকার লাগাতে হয়। বাংলাদেশের স্কুল, মাদ্রাসা ও অফিসে বিভিন্ন কাজের জন্য স্পিকার ব্যবহার খুবই সাধারণ বিষয়। স্পিকারের গুণমান যত ভালো, শব্দের মান ততই ভালো হয়।
৪. প্রজেক্টর
প্রজেক্টর মূলত বড় স্ক্রিনে বা দেয়ালে ছবি বা ভিডিও দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তার ভিতরের কনটেন্ট বড় পরিসরে উপস্থাপন করে।
বাংলাদেশে এখন অনেক স্কুল, কোচিং সেন্টার, এবং অফিসে প্রজেক্টরের ব্যবহার বাড়ছে। এটি বিশেষ করে প্রেজেন্টেশন, ক্লাস, বা মিটিংয়ের সময় কাজে আসে। প্রজেক্টরের মাধ্যমে আপনি অনেকগুলো মানুষকে একসাথে কোনো বিষয় দেখাতে পারেন, যা মনিটরে সম্ভব নয়।
৫. হেডফোন
হেডফোন স্পিকারের মতো হলেও এটি ব্যক্তিগত ব্যবহার উপযোগী। আপনি যখন কারো বিরক্ত না করে কম্পিউটারের শব্দ শুনতে চান, তখন হেডফোন ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশে ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন ক্লাসে হেডফোন ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া গেম খেলা, ভিডিও দেখা কিংবা গান শোনার সময়ও হেডফোন জনপ্রিয় একটি আউটপুট ডিভাইস। বর্তমানে ওয়্যারলেস হেডফোনও অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৬. প্লটার
প্লটার হচ্ছে বিশেষ ধরনের প্রিন্টার যা বড় সাইজের ডিজাইন বা নকশা প্রিন্ট করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন আর্কিটেক্ট বা ইঞ্জিনিয়াররা যেসব ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে, সেগুলো প্লটারে ছাপানো হয়।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ডিজাইন ফার্ম, ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগে প্লটারের ব্যবহার দেখা যায়। এটি অনেক সূক্ষ্ম কাজ করতে পারে, তাই সাধারণ প্রিন্টারের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।
৭. ব্রেইল রিডার
দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের জন্য তৈরি একটি বিশেষ আউটপুট ডিভাইস হলো ব্রেইল রিডার। এটি কম্পিউটারের লেখা তথ্যকে ব্রেইল লিপিতে রূপান্তর করে দেয় যাতে অন্ধ ব্যবহারকারীরা স্পর্শের মাধ্যমে তা বুঝতে পারেন।
বাংলাদেশে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে কিছু এনজিও এবং স্কুল ব্রেইল রিডার ব্যবহার করছে। এটি প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করছে।
৮. ভিডিও কার্ড (GPU Output)
ভিডিও কার্ড মূলত গ্রাফিক্স প্রসেসিংয়ের কাজ করে এবং মনিটরে উন্নত মানের ছবি ও ভিডিও দেখাতে সাহায্য করে। এটি নিজেও একটি আউটপুট ডিভাইস, কারণ এটি মনিটরে ডেটা প্রেরণ করে।
গেমার, ভিডিও এডিটর এবং গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য ভিডিও কার্ড অপরিহার্য। বাংলাদেশে যারা প্রফেশনাল ডিজাইনার বা ইউটিউবার, তারা উচ্চক্ষমতার GPU ব্যবহার করে থাকেন।
৯. ভিজুয়াল ডিসপ্লে ইউনিট (VDU)
VDU বলতে মূলত মনিটর এবং ভিডিও কার্ড মিলিয়ে যে চিত্র তৈরি হয়, সেটাকেই বোঝায়। এটি কম্পিউটার থেকে পাওয়া তথ্য চিত্র বা ভিডিওর আকারে দেখায়।
বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে VDU ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন মনিটরিং কাজে। যেমন ব্যাংকের সিকিউরিটি মনিটরিং বা সিসিটিভি পর্যবেক্ষণে VDU অপরিহার্য।
১০. স্মার্ট টিভি (কম্পিউটার কানেকশন)
আজকাল অনেক স্মার্ট টিভি রয়েছে যা কম্পিউটারের সাথে সংযোগ দিয়ে আউটপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করে। আপনি পেনড্রাইভ বা HDMI দিয়ে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
বাংলাদেশে অনেক বাসায় এখন স্মার্ট টিভি আছে এবং মানুষ সেটাকে শুধু টিভি হিসেবেই নয়, কম্পিউটারের বড় স্ক্রিন হিসেবেও ব্যবহার করে। এতে কাজের সুবিধা ও বিনোদন – দুটোই মেলে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
“১০ টি আউটপুট ডিভাইসের নাম” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
আউটপুট ডিভাইস কেন দরকার?
কম্পিউটারের তথ্য চোখে দেখা বা কানে শোনার জন্য আউটপুট ডিভাইস দরকার হয়।
মনিটর কি শুধুই ভিডিও দেখার জন্য ব্যবহার হয়?
না, মনিটরের মাধ্যমে আপনি লেখা পড়া, ছবি দেখা, গেম খেলা সহ বিভিন্ন কাজ করতে পারেন।
উপসংহার
আজকের আলোচনায় আমরা জেনেছি আউটপুট ডিভাইস কী এবং এটি কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আশা করি আপনি এখন আউটপুট ডিভাইস সম্পর্কে অনেক পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। আমরা শুধু মনিটর বা প্রিন্টারই নয়, আরও অনেক ধরণের ডিভাইস প্রতিদিন ব্যবহার করছি যেগুলো আসলে আউটপুট ডিভাইস।
আমাদের উচিত এই প্রযুক্তিগুলোর সঠিক ব্যবহার শেখা এবং এগুলোর সংরক্ষণে মনোযোগী হওয়া। কারণ এগুলো না থাকলে কম্পিউটার ব্যবহারে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। তাই প্রযুক্তিকে বুঝে ব্যবহার করলেই আমরা এর আসল উপকারটা পেতে পারি।