|

১০ টি ইনপুট ডিভাইসের নাম বাংলায়

তুমি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করো, কখনো কি ভেবে দেখেছো তুমি কীভাবে কম্পিউটারকে নির্দেশ দাও? আমরা যেসব যন্ত্র বা উপায় দিয়ে কম্পিউটারকে তথ্য দিই বা কোনো কাজ করাই, সেগুলোকেই বলে ইনপুট ডিভাইস। আজকে আমরা খুব সহজভাবে এই ইনপুট ডিভাইস সম্পর্কে জানবো। তোমার যদি কম্পিউটার বা প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে এই লেখাটা তোমার জন্য খুব কাজে দেবে। চলো, তাহলে শুরু করি।

ইনপুট ডিভাইস কি?

ইনপুট ডিভাইস হচ্ছে এমন একধরনের যন্ত্র, যেটার মাধ্যমে ব্যবহারকারী কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিজিটাল যন্ত্রকে তথ্য সরবরাহ করতে পারে। সহজ কথায়, তুমি যখন কম্পিউটারকে কিছু বলো, দেখাও বা দাও, সেটা ইনপুট ডিভাইস দিয়েই করো। উদাহরণ হিসেবে, তুমি যখন কীবোর্ড দিয়ে টাইপ করো বা মাউস দিয়ে ক্লিক করো, তখন তুমি ইনপুট দিচ্ছো। আবার তুমি যদি মাইক্রোফোনে কথা বলো, সেটাও ইনপুট। এই ইনপুট ডিভাইসগুলো কম্পিউটারের ভাষায় সেই তথ্যকে রূপান্তর করে, যাতে কম্পিউটার বুঝতে পারে এবং কাজ করতে পারে। এই ডিভাইস ছাড়া কম্পিউটার অচল, কারণ ব্যবহারকারী কী চায়, সেটা জানার একমাত্র উপায় এগুলো। ইনপুট ডিভাইস বিভিন্ন ধরনের হয় – কিছু দিয়ে লেখা যায়, কিছু দিয়ে ছবি তোলা যায়, আবার কিছু দিয়ে কথা বলা যায়। সব মিলিয়ে, এই ডিভাইসগুলো আমাদের কাজকে সহজ করে তোলে এবং প্রযুক্তিকে আরও মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসে।

১০ টি ইনপুট ডিভাইসের নাম বাংলায়

এখন আমরা এমন ১০টি ইনপুট ডিভাইসের কথা জানবো, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিটি ডিভাইস সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো, যেন তুমি বুঝতে পারো কোনটা কীভাবে কাজ করে এবং আমাদের কাজে কীভাবে সাহায্য করে।

কীবোর্ড

কীবোর্ড হলো সবচেয়ে পরিচিত ইনপুট ডিভাইসগুলোর একটি। তুমি নিশ্চয়ই কীবোর্ডে টাইপ করেছো – হ্যাঁ, সেটাই কীবোর্ড। কীবোর্ডে অনেকগুলো বোতাম থাকে, যেগুলোকে কী বলা হয়। প্রতিটি কী একেকটা অক্ষর, সংখ্যা বা বিশেষ কাজের জন্য। আমরা কীবোর্ড ব্যবহার করি লেখা টাইপ করতে, কমান্ড দিতে, এবং প্রোগ্রাম চালাতে। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় টাইপ করা যায় কীবোর্ড দিয়ে। আজকাল অনেক ভার্চুয়াল কীবোর্ডও আছে, যেগুলো স্ক্রিনে আসে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনে আমরা এই ভার্চুয়াল কীবোর্ড ব্যবহার করি। বিভিন্ন ধরনের কীবোর্ড বাজারে পাওয়া যায় – যেমন: মেমব্রেন, মেকানিক্যাল বা ওয়্যারলেস কীবোর্ড। যারা অনেক বেশি টাইপ করেন, যেমন লেখক বা প্রোগ্রামার, তারা সাধারণত ভালো মানের কীবোর্ড ব্যবহার করেন যাতে টাইপিং সহজ হয়। এক কথায়, কম্পিউটারে কোনো লেখার কাজ করতে গেলে কীবোর্ড ছাড়া সম্ভব নয়।

মাউস

মাউস একটি ছোট যন্ত্র যা হাতে ধরে কম্পিউটারে কার্সর চালাতে ব্যবহার করা হয়। তুমি নিশ্চয়ই মাউস দিয়ে ফাইল ওপেন করেছো বা ছবি সিলেক্ট করেছো – সেটাই মাউসের কাজ। এটি মূলত একটি পয়েন্টিং ডিভাইস। মাউস দিয়ে আমরা স্ক্রিনে যে আইকন দেখি, তা সরাতে পারি, ক্লিক করতে পারি এবং ড্র্যাগ করতে পারি। মাউস সাধারণত দুই বা তিনটা বোতাম থাকে – বাম বাটন, ডান বাটন এবং মাঝখানে একটি স্ক্রল হুইল। মাউস দুই ধরনের হতে পারে – ওয়্যারড (তারযুক্ত) এবং ওয়্যারলেস (তারবিহীন)। আজকাল অপটিক্যাল মাউসই বেশি চলে, যেটা লাইট সেন্সরের মাধ্যমে কাজ করে। আগে বলের মাউস ব্যবহার হতো, কিন্তু এখন সেটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। যারা ডিজাইন বা গ্রাফিক্সের কাজ করেন, তাদের জন্য মাউস খুব দরকারি।

মাইক্রোফোন

তুমি যদি কম্পিউটারে কথা বলতে চাও বা গান রেকর্ড করতে চাও, তাহলে মাইক্রোফোন লাগবে। এটি এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যা শব্দ সংগ্রহ করে এবং কম্পিউটারে পাঠায়। মাইক্রোফোন দিয়ে শুধু কথা বলা নয়, ভয়েস কমান্ড দেওয়া যায়, অনলাইন ক্লাস নেওয়া যায়, ভিডিও কলে কথা বলা যায়। আবার মাইক্রোফোন দিয়ে বিভিন্ন গেম খেলার সময় কথাবার্তাও করা যায়। এখন অনেক মাইক্রোফোন হেডফোনের সঙ্গে থাকে। ভালো মানের মাইক্রোফোনে শব্দ পরিষ্কার হয় এবং শোর কম থাকে। পডকাস্ট, ইউটিউব ভিডিও, অনলাইন মিটিং – সবখানেই মাইক্রোফোন দরকার হয়। বর্তমানে ওয়্যারলেস মাইক্রোফোনও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যারা বাইরে ভিডিও করে তাদের জন্য।

স্ক্যানার

তুমি যদি কোনো কাগজের ছবি বা লেখা কম্পিউটারে তুলতে চাও, তাহলে স্ক্যানার দরকার হবে। স্ক্যানার হলো একটি ইনপুট ডিভাইস যা ছবি বা ডকুমেন্ট স্ক্যান করে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করে। ধরো, তোমার কাছে একটি প্রিন্ট করা ছবি আছে, তুমি সেটা কম্পিউটারে তুলতে চাও – স্ক্যানার সেটি করে দেয়। এটি অনেক দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে কাজ করে। অফিসে, স্কুলে বা ব্যাংকে স্ক্যানার খুব দরকারি। এখন অনেক মাল্টিফাংশন প্রিন্টারেও স্ক্যানার থাকে, যেটা একসাথে প্রিন্ট, কপি আর স্ক্যান করতে পারে। স্ক্যানারের মাধ্যমে স্ক্যান করা ফাইল PDF, JPG বা অন্য ফরম্যাটে সংরক্ষণ করা যায়। OCR (Optical Character Recognition) প্রযুক্তির মাধ্যমে স্ক্যান করা লেখাকেও টাইপ করা লেখায় রূপান্তর করা যায়।

ওয়েবক্যাম

ওয়েবক্যাম হলো একটি ছোট ক্যামেরা যা কম্পিউটারে সংযুক্ত থাকে এবং লাইভ ভিডিও ধারণ করে। আমরা ওয়েবক্যাম ব্যবহার করি ভিডিও কল করার জন্য, অনলাইন ক্লাস করার জন্য বা ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়ার জন্য। আজকাল ল্যাপটপে বিল্ট-ইন ওয়েবক্যাম থাকে, তবে ডেক্সটপ কম্পিউটারের জন্য আলাদা ওয়েবক্যাম কিনতে হয়। ওয়েবক্যামের মাধ্যমে ছবি তোলা যায়, ভিডিও রেকর্ড করা যায়, এমনকি লাইভ স্ট্রিমও করা যায়। ইউটিউবার বা স্ট্রিমাররা ভালো মানের ওয়েবক্যাম ব্যবহার করেন যেন ভিডিওর মান ভালো হয়। বর্তমানে ওয়েবক্যামে HD বা Full HD রেজোলিউশনও পাওয়া যায়। এটি কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইস হিসেবে বিবেচিত।

টাচস্ক্রিন

টাচস্ক্রিন এমন একধরনের ইনপুট ডিভাইস, যেখানে তুমি সরাসরি স্ক্রিনে হাত দিয়ে কাজ করতে পারো। এটি আজকাল স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ATM মেশিন এমনকি ল্যাপটপেও ব্যবহার হয়। টাচস্ক্রিনে আঙুলের স্পর্শ বা স্টাইলাস কলমের মাধ্যমে কম্পিউটার ইনপুট নেয়। এটি দ্রুত এবং ব্যবহারবান্ধব। আমরা টাচ করে অ্যাপ ওপেন করি, টাইপ করি, স্ক্রল করি, আবার ছবি আঁকাও করতে পারি। টাচস্ক্রিন ইনপুট ডিভাইস হিসেবে অনেক কাজ করে, যেমন: পয়েন্টিং ডিভাইস, কীবোর্ড বা মাউসের বিকল্প। শিশুদের জন্য টাচস্ক্রিন খুব সুবিধাজনক কারণ এতে শেখা সহজ হয়।

জয়স্টিক

জয়স্টিক হলো একটি ইনপুট ডিভাইস যা সাধারণত ভিডিও গেম খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একধরনের লিভার বা হাতলের মতো, যেটা বিভিন্ন দিকে ঘোরানো যায়। গেম খেলার সময় তুমি যখন চরিত্র বা গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করো, তখন জয়স্টিক দিয়ে সেটা করা হয়। প্লেন সিমুলেটর, রেসিং গেম, বা ফাইটিং গেমে জয়স্টিক খুবই দরকারি। কিছু কিছু পেশাদার প্রশিক্ষণেও জয়স্টিক ব্যবহার করা হয়, যেমন পাইলট ট্রেনিং। এখন ওয়্যারলেস জয়স্টিকও পাওয়া যায়, যা ব্লুটুথ বা ইউএসবি দিয়ে কানেক্ট করা যায়।

ডিজিটাইজিং ট্যাবলেট

ডিজিটাইজিং ট্যাবলেট হলো এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যেটি ডিজাইনার বা শিল্পীদের জন্য বানানো হয়েছে। এটি দেখতে এক ধরনের পাতলা বোর্ডের মতো, যার ওপরে কলম দিয়ে আঁকা যায়। তুমি যখন কলম দিয়ে আঁকো, সেটা কম্পিউটারে সরাসরি দেখা যায়। এই ডিভাইসের সাহায্যে সূক্ষ্ম এবং নিখুঁত ডিজাইন করা যায়। গ্রাফিক ডিজাইনাররা সাধারণত এই ট্যাবলেট ব্যবহার করেন Adobe Photoshop, Illustrator বা অন্য সফটওয়্যারে কাজ করতে। অনেকে এটিকে “ড্রয়িং প্যাড” নামেও চেনেন। এই ডিভাইস আঁকাকে ডিজিটাল রূপ দেয়।

গেম কন্ট্রোলার

গেম কন্ট্রোলার হলো এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যা ভিডিও গেম খেলার জন্য তৈরি। এটি দেখতে ছোট রিমোট কন্ট্রোলের মতো, যেখানে বিভিন্ন বোতাম ও জয়স্টিক থাকে। তুমি যখন গেম খেলো, তখন এই কন্ট্রোলার দিয়ে চরিত্র চালাও, লাফ দাও, যুদ্ধ করো বা দৌড়াও। প্লে-স্টেশন, এক্সবক্স, পিসি – সব জায়গাতেই গেম কন্ট্রোলার ব্যবহৃত হয়। গেম কন্ট্রোলারের বিভিন্ন ডিজাইন ও ফিচার থাকে, যেমন ভাইব্রেশন, এলইডি লাইট, ওয়্যারলেস কানেকশন ইত্যাদি।

বারকোড স্ক্যানার

বারকোড স্ক্যানার হলো এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যা পণ্যের গায়ে থাকা বারকোড পড়ে ফেলে। সুপারশপে তুমি নিশ্চয়ই দেখেছো, পণ্যের ওপর একটি লাল আলো ফেলে কোড স্ক্যান করা হয় – ওটাই বারকোড স্ক্যানার। এটি ইনপুট হিসেবে পণ্যের তথ্য কম্পিউটারে পাঠায়, যার মাধ্যমে দাম, নাম ও স্টক ম্যানেজ করা যায়। এখন অনেক প্রতিষ্ঠান বারকোড স্ক্যানার ব্যবহার করে গুদাম ও বিক্রির হিসাব রাখতে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

“১০ টি ইনপুট ডিভাইসের নাম বাংলায়” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

ইনপুট ডিভাইস আর আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে পার্থক্য কী?

ইনপুট ডিভাইস কম্পিউটারকে তথ্য দেয়, আর আউটপুট ডিভাইস কম্পিউটার থেকে তথ্য দেখায় বা বের করে।

মোবাইল ফোনের টাচস্ক্রিন কি ইনপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করে?

হ্যাঁ, টাচস্ক্রিন ইনপুট ডিভাইস কারণ এতে আমরা সরাসরি স্পর্শ করে নির্দেশ দিই।

উপসংহার

তোমার সঙ্গে আজ আমরা ইনপুট ডিভাইস নিয়ে অনেক কিছু জানলাম। তুমি নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারছো, আমরা প্রতিদিন কতভাবে ইনপুট ডিভাইস ব্যবহার করি। কম্পিউটারে তথ্য দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো ইনপুট ডিভাইস। এগুলো ছাড়া কম্পিউটার একটা বাক্স ছাড়া কিছুই না। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, এই ডিভাইসগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার। আশা করি এই লেখাটা তোমার অনেক কাজে আসবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *