কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
আগের সময়ে কম্পিউটার ছিল শুধু অফিস বা বড় বড় প্রতিষ্ঠানে, কিন্তু এখন ঘরে ঘরে এটা দেখা যায়। পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা, এমনকি ঘরের কাজেও কম্পিউটার সাহায্য করছে। আপনি যদি এখনো কম্পিউটার নিয়ে ভালোভাবে না জানেন বা বিভ্রান্ত হন, তাহলে এই লেখাটা আপনার জন্যই। চলুন তাহলে একেবারে সহজভাবে বুঝে নিই, কম্পিউটার আসলে কী, কত প্রকার, আর কোন কোন ধরনের কম্পিউটার আমাদের আশেপাশে দেখা যায়।
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হলো এক ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা আমাদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে। সহজভাবে বললে, এটা হচ্ছে এমন একটা যন্ত্র যেটাতে আমরা কিছু ইনপুট দিলে, সেটা সেই তথ্য প্রক্রিয়া করে আমাদের আউটপুট দেয়। উদাহরণ হিসেবে ধরুন, আপনি যদি কম্পিউটারে একটা সংখ্যা যোগ করেন, তখন সেটা নিজে নিজে হিসেব করে আপনাকে ফলাফল দেখাবে।
কম্পিউটার কাজ করে প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এগুলো আগে থেকেই তৈরি করে দেওয়া হয় যাতে সে বুঝতে পারে, কোন ইনপুট পেলে কীভাবে কাজ করতে হবে। এই যন্ত্রটা শুধু হিসেব-নিকেশই না, ইমেল পাঠানো, ভিডিও দেখা, লেখালেখি, ছবি এডিট করা, এমনকি গেম খেলার জন্যও ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটার প্রধানত চারটা অংশ নিয়ে গঠিত—ইনপুট ইউনিট, প্রসেসিং ইউনিট, মেমোরি, আর আউটপুট ইউনিট। এই চারটি মিলে একটা কম্পিউটারকে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। যেমন, আপনি যদি কীবোর্ডে কিছু টাইপ করেন, সেটি ইনপুট, তারপর সেটা প্রোসেস হয়, মেমোরিতে কিছুক্ষণ থাকে এবং শেষে মনিটরে দেখা যায়।
এখনকার দিনে ডেক্সটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, এমনকি মোবাইলও একধরনের কম্পিউটার হিসেবেই ধরা যায়। ছোট ছোট আকারের কম্পিউটার এখন এত শক্তিশালী যে আপনি একটা ল্যাপটপ দিয়েই পুরো অফিসের কাজ করে ফেলতে পারেন। এই যন্ত্রটা আমাদের সময় বাঁচায়, কাজ সহজ করে, আর অনেক বেশি কার্যকরী করে তোলে।
কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?
কম্পিউটার অনেক প্রকারের হতে পারে। এর প্রকারভেদ মূলত নির্ভর করে এর আকার, ক্ষমতা, কাজের ধরন এবং ব্যবহারকারীর চাহিদার ওপর। নিচে আমরা কম্পিউটারের কিছু প্রধান প্রকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যেন আপনি সহজেই বুঝতে পারেন কোনটা কেমন আর কাদের জন্য উপযোগী।
সুপার কম্পিউটার
সুপার কম্পিউটার হলো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার। এটা খুব জটিল এবং বড় বড় কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া, মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু গবেষণা, জেনেটিক্স, এবং মিসাইল নিয়ন্ত্রণে এই ধরণের কম্পিউটার ব্যবহার হয়। এরা প্রচুর ডেটা খুব অল্প সময়ে প্রসেস করতে পারে।
সাধারণ মানুষ এই ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করে না। এটা তৈরি হয় বিশেষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি ল্যাবরেটরির জন্য। সুপার কম্পিউটার একসাথে হাজার হাজার প্রসেসর নিয়ে কাজ করে এবং অনেক বেশি শক্তি ব্যবহার করে। এর দামও অনেক বেশি হয়। বাংলাদেশে এই ধরনের কম্পিউটার খুব বেশি দেখা যায় না, তবে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে ভবিষ্যতে হয়তো এর প্রয়োগ বাড়বে।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মেইনফ্রেম কম্পিউটার হলো এমন এক ধরনের বড় কম্পিউটার যেটা একসাথে অনেক ব্যবহারকারীকে সার্ভিস দিতে পারে। ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, রেলওয়ে, এয়ারলাইন্স, এবং সরকারি বড় অফিসে এই ধরনের কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
এই কম্পিউটার গুলো অনেক বড় এবং এদের সংরক্ষণের জন্য আলাদা রুম দরকার হয়। মেইনফ্রেম কম্পিউটার দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা চলতে পারে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—উচ্চ ক্ষমতা, বড় ডেটা হ্যান্ডলিং, আর অনেক ব্যবহারকারীর একসাথে কাজ করার সুবিধা। বাংলাদেশে কিছু বড় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার দেখা যায়।
মিনি কম্পিউটার
মিনি কম্পিউটার হচ্ছে মেইনফ্রেম কম্পিউটারের ছোট সংস্করণ। এটাও একাধিক ব্যবহারকারী একসাথে ব্যবহার করতে পারে, তবে এর ক্ষমতা মেইনফ্রেমের চেয়ে কম। একে মিডরেঞ্জ কম্পিউটারও বলা হয়।
এটা সাধারণত ছোট কোম্পানি, কলেজ, বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। মিনি কম্পিউটার ব্যবহারে খরচ কম, এবং এটা সহজেই স্থাপনযোগ্য। এ ধরনের কম্পিউটার বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা গবেষণা কেন্দ্রে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। যদিও এখন মিনি কম্পিউটারের ব্যবহার কিছুটা কমে গেছে কারণ ল্যাপটপ বা সার্ভার কম্পিউটার অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে।
পার্সোনাল কম্পিউটার (PC)
পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি হচ্ছে সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় কম্পিউটার ধরনের একটি। এটা আমরা বাসায়, অফিসে বা দোকানে ব্যবহার করি। এর মধ্যে ডেক্সটপ ও ল্যাপটপ—এই দুই ধরনের কম্পিউটার পড়ে।
এই কম্পিউটার এককভাবে একজন ব্যবহারকারী ব্যবহার করে। এতে ওয়ার্ড, এক্সেল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা, গেম খেলা, প্রোগ্রামিং, ইমেল পাঠানো—সব কিছুই করা যায়। বাংলাদেশের প্রতিটি শহরেই এখন পিসি ব্যবহার খুব সাধারণ ব্যাপার। পড়াশোনা, অনলাইন ক্লাস, ফ্রিল্যান্সিং, এমনকি ইউটিউব চ্যানেল চালাতেও এখন পিসি ব্যবহার করা হচ্ছে।
হ্যান্ডহেল্ড কম্পিউটার
এই ধরনের কম্পিউটার খুব ছোট হয় এবং হাতে ধরে ব্যবহার করা যায়। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, এবং পিডিএ (Personal Digital Assistant) এই ধরনের কম্পিউটারের মধ্যে পড়ে। এগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হলো—সহজে বহনযোগ্যতা এবং ব্যাটারিতে চলার ক্ষমতা।
বাংলাদেশে স্মার্টফোন এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হ্যান্ডহেল্ড কম্পিউটার। আপনি একটা স্মার্টফোন দিয়েই ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারেন, ভিডিও দেখতে পারেন, ভিডিও এডিট করতে পারেন, এমনকি অফিসের কাজও করতে পারেন। ছোট হলেও এর ক্ষমতা অনেক। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী—সবাই এখন এই হ্যান্ডহেল্ড কম্পিউটার ব্যবহার করছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
“কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
কম্পিউটার কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়?
অফিস, স্কুল, ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এমনকি ঘরেও কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
কি-বোর্ড ও মাউস কম্পিউটারের কোন অংশ?
কি-বোর্ড ও মাউস কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইস, যেগুলো দিয়ে আমরা কম্পিউটারকে নির্দেশ দিই।
উপসংহার
কম্পিউটার আমাদের জীবনে এক নতুন বিপ্লব এনেছে। আগে যে কাজগুলো মানুষকে হাতে করতে হতো, এখন তার অনেকটাই কম্পিউটার দিয়ে অটোমেটিক হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এখন কম্পিউটার ছাড়া কোনো কাজ কল্পনা করা যায় না—পড়াশোনা, ব্যবসা, সরকারী কাজ, এমনকি ঘরোয়া বিনোদনেও এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই, কম্পিউটার সম্পর্কে জানা শুধু দরকারি না, বরং সময়ের দাবি। আশা করি আজকের এই লেখাটি পড়ে আপনি সহজভাবে কম্পিউটার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।